আসলে HPV (হিউম্যান প্যাপিলোমাভাইরাস) টিকা , যা জরায়ুর ক্যান্সার এবং HPV দ্বারা সৃষ্ট অন্যান্য ক্যান্সার এবং রোগ প্রতিরোধে অত্যন্ত কার্যকর। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা, বিশেষ করে তরুণীদের জন্য যৌন সক্রিয় হওয়ার আগে।
এখানে আরও বিস্তারিতভাবে দেখুন:
এটি কী: এইচপিভি ভ্যাকসিন এইচপিভির বিভিন্ন ধরণের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দেয়, যার মধ্যে সাধারণত জরায়ুমুখের ক্যান্সারের কারণ হয় এমনগুলিও অন্তর্ভুক্ত। এটি কেবল জরায়ুমুখের ক্যান্সারের জন্য নয়; এটি অন্যান্য ক্যান্সার এবং যৌনাঙ্গের আঁচিল প্রতিরোধেও সহায়তা করে।
কেন এটি গুরুত্বপূর্ণ:
জরায়ুমুখ ক্যান্সার প্রতিরোধ:
এইচপিভি হল জরায়ুমুখ ক্যান্সারের প্রধান কারণ, এবং টিকা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই প্রতিরোধ করতে পারে।
অন্যান্য এইচপিভি-সম্পর্কিত ক্যান্সার:
এটি মলদ্বার, অরোফ্যারিঞ্জিয়াল (গলার পিছনের অংশ), যোনি, ভালভার এবং লিঙ্গ ক্যান্সারের মতো অন্যান্য ক্যান্সার থেকেও রক্ষা করে।
যৌনাঙ্গে আঁচিল:
এই টিকা যৌনাঙ্গের আঁচিল প্রতিরোধেও সাহায্য করে, যা নির্দিষ্ট কিছু HPV স্ট্রেনের কারণে হয়।
কার্যকারিতা:
এইচপিভির সংস্পর্শে আসার আগে এই টিকাটি দেওয়া অত্যন্ত কার্যকর, তবে কেউ ইতিমধ্যেই সংস্পর্শে এসে থাকলেও এটি উপকারিতা প্রদান করে।
কখন এটি পেতে হবে:
কিশোর-কিশোরীদের জন্য প্রস্তাবিত:
প্রাথমিক লক্ষ্য বয়স গোষ্ঠী হল ১১-১২ বছর বয়সী, তবে ৯ বছর বয়স থেকেই টিকাকরণ শুরু করা যেতে পারে।
ক্যাচ-আপ টিকাকরণ:
এটি 26 বছর বয়স পর্যন্ত যারা টিকা নেননি বা সিরিজটি সম্পন্ন করেননি তাদের জন্যও সুপারিশ করা হয়।
যৌন কার্যকলাপের আগে:
কোনও ব্যক্তি যৌনভাবে সক্রিয় হওয়ার এবং HPV-এর সংস্পর্শে আসার আগে এই টিকা দেওয়া হলে তা সবচেয়ে কার্যকর।
এটি কীভাবে পরিচালিত হয়:
ইনজেকশন: এইচপিভি ভ্যাকসিনটি ইনজেকশনের একটি সিরিজ হিসাবে দেওয়া হয়, সাধারণত তিনটি ডোজ।
ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন: একজন ব্যক্তির জন্য উপযুক্ত টিকাদানের সময়সূচী নির্ধারণের জন্য একজন ডাক্তার বা স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর সাথে পরামর্শ করা ভাল।
গুরুত্বপূর্ণ বিবেচ্য বিষয়:
স্ক্রিনিং এখনও প্রয়োজন:
টিকা দেওয়ার পরেও, ২৫-৭৪ বছর বয়সী মহিলাদের জন্য নিয়মিত জরায়ুমুখের ক্যান্সার স্ক্রিনিং (প্যাপ টেস্ট বা এইচপিভি পরীক্ষা) করার পরামর্শ দেওয়া হয়, কারণ এই টিকা ক্যান্সারের কারণ হতে পারে এমন সমস্ত এইচপিভি ধরণের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দেয় না।
নিরাপত্তা:
এইচপিভি ভ্যাকসিন সাধারণত নিরাপদ, এবং পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সাধারণত হালকা হয় (যেমন ইনজেকশনের স্থানে ব্যথা)।
গর্ভবতী মহিলা:
যদিও গর্ভবতী মহিলাদের জন্য এই টিকাটি সুপারিশ করা হয় না, তবে এটি স্তন্যপান করানো মায়েদের জন্য নিরাপদ।
জরায়ু ক্যান্সার স্ক্রিনিং(Cervical Cancer Screening) :
জরায়ু মুখের (cervix) ক্যান্সার আগেভাগে শনাক্ত করার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি। এই স্ক্রিনিং-এর মাধ্যমে প্রাথমিক পর্যায়ে অসংক্রামক কোষের পরিবর্তন ধরা পড়ে, যা সময়মতো চিকিৎসা নিলে ক্যান্সারে রূপ নিতে পারে না।
স্ক্রিনিং পদ্ধতি সমূহ:
১. প্যাপ স্মিয়ার টেস্ট (Pap smear / Pap test)
বয়স: ২১ বছর থেকে শুরু করে ৬৫ বছর পর্যন্ত নারীদের জন্য।
ফ্রিকোয়েন্সি: প্রতি ৩ বছরে একবার।
কাজ: জরায়ু মুখের কোষের অস্বাভাবিক পরিবর্তন শনাক্ত করে।
২. এইচপিভি টেস্ট (HPV test)
এইচপিভি: একটি ভাইরাস যা জরায়ু ক্যান্সারের প্রধান কারণ।
বয়স: ৩০ বছর বা তার বেশি বয়সী নারীদের জন্য।
ফ্রিকোয়েন্সি: প্রতি ৫ বছরে একবার (একটি বা Pap-এর সাথে Co-testing)।
যদি শুধুমাত্র HPV টেস্ট করা হয়: প্রতি ৫ বছরেই যথেষ্ট।
৩. Co-testing (Pap smear + HPV test একসাথে)
ফ্রিকোয়েন্সি: প্রতি ৫ বছরে একবার।
উপযুক্ত: ৩০-৬৫ বছর বয়সীদের জন্য।
**কারা স্ক্রিনিং করাবেন?
1.যেসব নারীরা ২১-৬৫ বছর বয়সের মধ্যে।
2.যাদের যৌন জীবন শুরু হয়েছে।
3.যাদের পরিবারে জরায়ু ক্যান্সারের ইতিহাস আছে।
4.যারা দীর্ঘদিন ধরে ধূমপান করছেন বা ইমিউন সিস্টেম দুর্বল।
** স্ক্রিনিং দরকার নেই যদি:
বয়স ৬৫ বছরের বেশি এবং পূর্বে নিয়মিত পরীক্ষায় কোন সমস্যা ধরা পড়েনি।
জরায়ু অপসারণ (hysterectomy) করা হয়েছে এবং কোনো ক্যান্সার বা প্রি-ক্যান্সার ইতিহাস না থাকলে
উপসংহার:
প্রতিনিয়ত স্ক্রিনিং জরায়ু ক্যান্সার প্রতিরোধে অত্যন্ত কার্যকর। সময়মতো প্যাপ স্মিয়ার বা HPV টেস্ট করলে জীবন বাঁচানো সম্ভব।